জ্ঞান ভবিষ্যতের পুঁজি। উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ, সহজে, কম খরচে মানসম্মত জ্ঞান ও দক্ষতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ই-লার্নিং গোটা পৃথিবীতে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ই-লার্নিং যেমন ভীষন রকম প্রাসঙ্গিত, তেমনি জরুরিও বটে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সংখ্যা অনেকাংশে কম। আবার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক মানুষ নানা কারনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন দেশ হিসেবে যে অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে, সেই বাস্তবতায় দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে ই-লার্নিং জরুরি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ই-লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে নানা কোর্স চালু করেছে। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েট ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিত ক্লাস লেকচারের পাশাপাশি অনলাইনে শিক্ষা প্রদানের আয়োজন করেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময় কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন রেপটো.কম কিংবা স্টাডি.স্কুল সাধারনের জন্য বিভিন্ন ছোট ছোট দরকারি বিষয়ে ই-লার্নিং কোর্সের ব্যবস্থা করেছে।
ইদানিং বাংলাদেশে ওয়েব বেইসড লার্নিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন তরুণ ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউবিং, অনলাইনে আয়, উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ সংক্রান্ত নানা ভিডিও ও টেক্সট কনটেন্ট ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে শেয়ার করছে। বিষয়টি পুরো ই-লার্নিং প্রক্রিয়া না হলেও আগ্রহীরা শিখতে পারছে। এবং এই প্রচেষ্টা দেশের সম্ভবনাময় ই-লার্নিং খাতের দিকে ইশারা করছে। ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মুক্তপাঠ’ নামের প্রথম জাতীয় ই-লার্নিং প্লাটফর্ম উদ্বোধন করে বাংলাদেশে ই-লার্নিং শিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী এক যাত্রার শুরু করেন। আর মাত্র দুবছরের এই মুক্তপাঠের হাত ধরে একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) টানা পঞ্চমবারের মতো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার-২০১৮’ অর্জন করে।
মুক্তপাঠে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, যুবসমাজ, কর্মজীবী ব্যক্তি, বিদেশগামী কর্মী, প্রবাসী কর্মী কিংবা গৃহিণী- সবার জন্যই মুক্তপাঠে বিশেষায়িত অনলাইন কোর্স। শিক্ষকদের জন্য যেমন রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম সংশ্নিষ্ট কোর্স তেমনি বিদেশগামীদের ভাষাসহ নানা বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে ভিন্ন ভিন্ন কোর্স। কৃষকের জন্যও রয়েছে চমৎকার কোর্স। সাধারণ, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা- তিন বিভাগেই কোর্স রয়েছে পোর্টালটিতে। বর্তমানে ‘মুক্তপাঠ’-এ রয়েছে ১৯টি ই-লার্নিং কোর্স যেখানে রয়েছে প্রায় সহস্রাধিক কনটেন্ট। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মুক্তপাঠের ই-লার্নিং কোর্সগুলোর মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ করে তুলছে। এছাড়া বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) ও সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম যৌথভাবে মুক্তপাঠের মাধ্যমে সাংভাদিকদের জন্য চারটি অনলাইন প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে, যা ই-লার্নিং এর মাধ্যমে দেশে সাংবাদিকতা শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তুলেছে।
মুক্তপাঠ একই সাথে দেশের ই-লার্নিং কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারনকে উৎসাহিত করতে যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনি বাংলাদেশের ই-লার্নিং সেক্টরের একটি সম্ভাবনাময় স্বর্পেন চারা হিসেবে একটু একটু করে বেড়ে উঠেছে। মুক্তপাঠসহ অন্যান্য চলমান সরকারি বেসরকারি উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে, এবং সাধারন মানুষের প্রাযুক্তিক স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি করে ই-লার্নিং এর মাধ্যমে তাদেরকে চলমান তথ্যসমাজের যোগ্য বাসিন্দা করে তুলতে গোটা আইসিটি ইকোসিস্টেমের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
ই-লার্নিং যেহুতু পুরোটাই একশতভাগ তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা, এবং এর মাধ্যমে যদি আমারা দেশের প্রান্তিক মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে চাই, তাই প্রথম্ইে দেশের সামগ্রিক তথ্যপযুক্তি অবকাঠামোর দিকে নজর দিতে হবে। ই-লার্নিং কে কার্যকর ও জনপ্রিয় করতে চাই দেশের সর্বত্র ভালো ব্যান্ডউইথ. সহজলভ্য ও কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা। এই টুকু নিশ্চিত করতে না পারলে ই-লার্নিং এর সম্ভাবনা ও শক্তিকে আমরা কিছুতেই কাজে লাগাতে পারবো না। এছাড়া ই-লার্নিং বিষয়টি গ্লোবালি শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন এক সংস্কৃতি ও চর্চার জায়গা হিসেবে হাজির হয়েছে। বাংলাদেশেও ই-লার্নিংকে সাধারন মানুষের মধ্যে জনিপ্রয় করে একে দেশের শিক্ষা সংস্কৃতির অংশ করে তুলতে হবে।