কিভাবে করবেন মোবাইল সাংবাদিকতা

লেখাটি শেয়ার করুন

লেখাটিতে যা থাকছে

মূলত সারা পৃথিবীতেই মোবাইল প্রযুক্তি নির্ভর সাংবাদিকতার চর্চা একইসাথে নাগরিক সাংবাদিকতা ও প্রচলিত গণমাধ্যমের সাংবাদিকতার চর্চার জায়গায় বড়সড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সেটা যেমন কনটেন্ট তৈরি ও পরিবেশনে, তেমনি আয়োজনে। মোবাইলের মাধ্যমে একজন সাধারন নাগিরক বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করে এবং ইন্টারনেটের সহায়তায় সংবাদ তৈরি ও সম্পাদনা করে নিজের কমিউনিটিতে যেমন দ্রুত একটি ঘটনা বা সংবাদকে পৌঁছে দিতে পারছেন, তেমনি একজন মূলধারার গণমাধ্যমকর্মী মোবাইল প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে মফস্বলে বসে সংবাদ ঘটনার সরাসরি সম্প্রচার, জরুরি ছবি ও ফুটেজ পাঠাতে পারছেন কম খরচে। মোবাইল সাংবাদিকতা নিয়ে ধারাবাহিক লেখার আজ দ্বিতীয় কিস্তি। এখানে মোবাইল সাংবাদিকতায় কাজের ওয়ার্কফ্লো আলোচিত হয়েছে।

কিভাবে করবেন মোবাইল সাংবাদিকতা?

 

প্রচলিত সাংবাদিকতায় সংবাদগল্প বলার যে ধরণ, তাকে আমূল বদলে দিতে পারে মোবাইলের ব্যবহার। মোবাইল সাংবাদিকতায় একজন গণমাধ্যমকর্মী কেবল দরকারি সোর্স থেকে তথ্য ও মতামত নিয়ে একটি সাদামাটা হার্ড নিউজ পাঠিয়ে দিলেই আর চলছে না, তাকে ভিডিও স্টোরিটেলিং বুঝতে হচ্ছে। ফুটেজ সংগ্রহ, ছবি তোলার ব্যাকারণ, ভালো অডিও নেয়ার কলাকৌশল থেকে শুরু করে লাইটিং, সব ব্যাপারেই খুঁটিনাটি জানতে হচ্ছে। মোবাইলের মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ ও সংবাদ গল্প প্রস্তুতের জন্য কয়েকটি বিশেষ পদক্ষেপ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হচ্ছে :

১. পরিকল্পনা: মোবাইলের ব্যবহার করে ভালো স্টোরি বলতে হলে একজন সাংবাদিককে প্রথমে জুতসই পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে হবে। প্রথমত ভালো একটি স্টোরি এ্যাঙ্গেল বেছে নিতে হবে, যেটি দিয়ে তিনি একটি ভালো স্টোরী পাঠক-দর্শকের সামনে হাজির করতে পারেন। গুরুত্বপর্ন সোর্স বা সংবাদ উৎস কারা হবে, সে বিষয়েও তাকে পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। এছাড়া পরিকল্পনার মধ্যে আরও জরুরি যে বিষয়টি থাকতে হবে, সেটি হচ্ছে ভিডিওর মাধ্যমে কাক্সিখত গল্পটি বলার যথাযথ ছক। কি কি ফুটেজ তিনি গ্রহণ করবেন, কোন কোন বি-রোলগুলো তার স্টোরীটেলিং ও সম্পাদনাকে সহজ কওে তুলবে, সে সম্পর্কে ¯^চ্ছ ধারণা থাকতে সাংবাদিককে। আর এর সাথে একটা ড্রাফট স্ক্রিপ্ট তো থাকতেই হবে।

২. সংবাদ সংগ্রহ: পরিকল্পনা ধাপে সাংবাদিক তার সংবাদ উৎস ও সূত্রের যে তালিকা তৈরি করেছেন, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করতে হবে। সোর্সদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই করতে হবে।


ছবি: আল জাজিরা মিডিয়া ট্রেনিং এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার

৩. চিত্রগ্রহণ, স্ক্রিপ্টিং ও ভিডিও সম্পাদনা : মোবাইলে স্টোরিটেলিং-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এটি। একজন প্রতিবেদক তার গল্পটা মোবাইল ডিভাইস দিয়ে কীভাবে বললেন, কতোটা শক্তিশালীভাবে বলতে পারবেন, সেটা নির্ভর করবে এই ধাপে তার দক্ষতার উপর। একজন মোবাইল সাংবাদিককে ফটোগ্রাফি ও ভিস্যুয়াল তৈরির ব্যাকারনগুলো জেনে নিতে হবে, জেনে নিতে হবে শট ডিভিশনের নানা বিভাজন। তিনি তার গল্পটি কিভাবে সাজাবেন, কি কি ধরনের, কোন কোন এ্যাঙ্গেলে ফুটেজ ও ছবি সংগ্রহ করবেন, সে বিষয়ে তার স্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে। ফুটের সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম আলো (যদি লাগে), সে ব্যাপারে তাকে সচেতন থাকবে হবে। ফুটেজের অডিও শ্রবণযোগ্য কিনা, ভীড়, হট্টগোল সামলে ভালো সাউন্ড বাইট নেয়ার বিদ্যাটাও তাকে শিকে নিতে হবে। এর সাথে স্ক্রিপ্টিং, ভিডিও সম্পদনা, মোবাইলে ব্যবহারযোগ্য ভিডিও সম্পাদনা সফটওয়্যার ও সম্পদনার কলাকৌশল সম্পর্কে তাকে জানতে হবে।

৪. প্রতিবেদন প্রকাশ করা : মোবাইলের মাধ্যমে মনের মতো ভিস্যূয়াল গল্পটি বলতে পারার পর সেটিকে প্রকাশ-প্রচারের বিষয়ে ভাবতে হবে সাংবাদিককে। যিনি টেলিভিশনে কাজ করেন, তিনি তার স্টেশনে সংবাদ প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দিলেই হচ্ছে। কিন্তু নাগরিক সাংবাদিককে ভাবতে হবে ডিজিটাল প্লাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে। কিভাবে, কোন সময়ে সংবাদটি তিনি প্রকাশ করবেন সে বিষয়ে তার জানাশোনাও থাকতে হবে।

মোবাইল সাংবাদিক হতে চাইলে:

সাংবাদিকতায় মোবাইলের ব্যবহার করে তাক লাগানো, দর্শক আগ্রহী প্রতিবেদন তৈরির জন্য অনেকগুলো গুন আর জ্ঞানের সমন্বয় থাকতে হবে একজন সংবাদকর্মীর মধ্যে। প্রথমত মোবাইল প্রযুক্তিতে তার বুঝতে হবে। এই ডিভাইসটি দিয়ে তিনি কিভাবে একটি ভালো গল্প বলতে পারেন, সে বিষয়টি তাকে জানতে হবে। সাংবাদিকতায় নিত্যনতুন ব্যবহৃত এ্যাপস, যন্ত্রপাতি সম্পর্কে সবসময় আপডেট থাকতে হবে। সাধ্যের মধ্যে কোন ডিভাইসটি তার ফুটেজকে নিউজি করে তুলবে, টেলিভিশনের কিংবা ইউটিউবের দর্শককে আগ্রহী করে তুলবে, সে সম্পর্কে জানতে হবে। ভালো সাউন্ড ডিজাইনিং, বহনযোগ্য, সাশ্রয়ী সাউন্ড ডিভাইস সম্পর্কে জানতে হবে।  পরের আলোচনা আমরা করব মোবাইল সহযোগী বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে।

লেখাটি শেয়ার করুন:

সাম্প্রতিক লেখা

জনপ্রিয় লেখা

আরও লেখা পড়ুন

আমার
সম্পর্কে

আমি নাসিমূল আহসান। পড়াশুনা করেছি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। বর্তমানে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) সহকারী প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। পাশাপাশি পাটপণ্যের বহুমখিকরণ, বিপনন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইউজুট’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বিশেষায়িত কনটেন্ট মার্কেটিং এজন্সি ‘কনটেন্টো’র প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।